ক্যাঙ্গারু ।। জাহিদ সোহাগ


নিশ্চিন্তে ঘুমের বড়ি খাই, আমার কর্তারা অফিস করছেন দেখে, মানে তারা এখন রিক্রিয়েশন শেষে ক্লান্ত, ধরে নেই অফিসে আসবে-যাবে, মিটিংয়ের ফন্দি করে করে ‘অনেক কাজ করা হয়েছে, চলো, বেরিয়ে পড়ি’, এমন অবসাদে এসে ছুটির ঘণ্টা নাড়বেন। 

অনলাইন-অফিস। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জার, ইমেইল ইত্যাদি। হয়ত মেক্সিকোর কোনো বীচে ভলিবল খেলে পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন নীলাভ সমুদ্রকে সানগ্লাসের বাইরে রেখে। 

আমি একইসঙ্গে কয়েকটি ডিভাইস খুলে রাখি, কোনোটা হাত কোনোটা পা দিয়ে রিফ্রেশ করি বারবার, হয়ত মাত্রই একটি মেইল দেখতে দেরি, আহ্, আমাদের ক্যাঙ্গারুর ব্যবসাটা হোচট খেয়ে গেলো। যেন তারা ক্যাঙ্গারু কিনে পিকাপভ্যানে তুলতে যাচ্ছেন এমন সময় মনে হলো দেখি তো দেশের বাজার কতখানি আছে, উত্তর দিতে দেরি হলো, ক্যাঙ্গারুটিকে মাটিতে নামিয়ে রাখলেন আর সেটা লাফাতে লাফাতে চলে গেলো। 

মেক্সিকোয় ক্যাঙ্গারু পাওয়া যায় কিনা তা আমি জানি না, এও জানি না যে, তারা এখন মেক্সিকোয় আছেন কিনা।
আমি সন্ধ্যা হলেই ঘুমের বড়ি খাই। মশারি না খাটিয়ে মুখের উপর মশা থাপরাতে থাপরাতে না-ঘুমিয়ে না-মশা মেরে রাতগুলো পার করি। 

সকাল নয়টায় শুরু হয় আমার বৃদ্ধাঙ্গুলে পরিচয় আছে কিনা, আইডি কার্ডে ও নিজের চোখে পটাপট দরজা খুলছে কিনা, গার্ডের স্যালুট না সয়ে হনহন ছুটছি। সিসি ক্যামেরাগুলোর শেষপ্রান্তে নিভু নিভু দুটি চোখে আমি আছি কিনা, চা-বিস্কুট নিয়ে হাজির হয় পিয়ন।
লাঞ্চ আওয়ারে সবাই হাফ ছাড়ি, ক্যান্টিনে খাবারের ঘ্রাণ, শেষে হা করে নারীদের লিপস্টিক ঘষাঘষি। যে টেবিলে সুন্দরী বেশি আড্ডায় গুলজার তত, সিট পাওয়া যাবেই না। আমি যথারীতি প্রতিযোগীতায় না-নামা মানুষ। হাসলে মুখটি আকর্ণবিস্তৃত হয়, নাকও নয় বেশি ধারালো এমন কারুর সঙ্গে ভাব করে রেখেছি। সেই আমার জন্য সিট বাঁচিয়ে রাখে।

‘দেরি হলো যে?’ সে যথাসম্ভব না হেসে পেছনে আমার দিকে মুখ নিয়ে বলেন। আমি বাম হাতে চেয়ার টেনে ভেজা ডান হাতটি প্লেটে রেখে জবাব দেই, গতকাল যে জবাব দিয়েছিলাম।
ভীষণ কাজের চাপ। কী কী কাজ তা ঠিক বলতে পারছি না। সেও তারটা জানে না, এখন বিকাল হবার অপেক্ষা করা ছাড়া। 

আমি এক টুকরো মুরগির মাংস, হেলিকপ্টার নাম যার, ভাতের উপর নিয়ে তলায় ঝোলের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে ভাবছি। ভাবছি? এই ধরুন...না, তেমন কিছু নয়, গতকালও তাই ভেবেছিলাম। 

সে তার অভ্যাসমতো মুখের মধ্যে মাখাভাত চালান করে চিবিয়ে চিবিয়ে পেটের মধ্যে ফেলেন, আমিও তাকে অনুসরণ করি।
কাল কী কী কথা বলেছিলাম তা মনে করতে করতে আমি ভাত মাখি, যাতে একই কথা বারবার বলা হয়ে না যায়। কলিগদের সঙ্গে যতই খাতির থাক চামরার নিচে ধারালো ছুরি আছে, যার রক্তাক্ত করা ছাড়া অন্য কাজ নেই। পেট থেকে একটি শস্য যিনি উগড়ান, পরদিন শস্য চালানকারী আরেক পেটওয়ালার কাছে বলেন আবেগের বশে। তবে, এর সঙ্গে আমার তেমন নেই, তিনি প্রায় কথা বলেনই না তার আকর্ণবিস্তৃত ঠোঁট ঢেকে রাখার জন্য।

আবার আমরা স্পোর্টস জোনে যাই। যার যার মাথা খুলে লাত্থি দিতে শুরু করি। রীতিমাফিক আমি ক-এর কাছে আমার মাথা লাথি দিয়ে দিলাম, চ তার মাথা আমাকে পাস করে দিল, জ হয়ত নিজের পায়ে কোনো মাথাই পাচ্ছে না। সে রেফারির মতো সারা মাঠ দৌড়াচ্ছে।
খেলা শেষ। আমরা যে যার মাথা নিয়ে দেই ছুট। যার হাতের কাছে যেটা আছে, সেটা তার মাথা হতেই পারে।

যে বিভাগে লেখা , |

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

পুরাতন পোস্ট হোম

ইমেইলে নিন সাম্প্রতিক প্রকাশনা

    =*একটু সম্পাদকীয়*=

    দিন দুপুর একটি অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা, সমাজ-সংস্কৃতির ভাল-মন্দ, উত্থান-পতন আর সংঘাত-প্রতিঘাত, ঘৃনা-প্রেম অর্থাৎ পৃথিবীর তাবৎ বিষয় উঠিয়ে নিয়ে আসে তার প্রতিটি পাতায়। লেখকদের মননশীল লেখায় প্রতিটি বিষয় হয়ে উঠে ব্যঞ্জনাময় আর সঙ্গত, পাঠকের আগ্রহে প্রতিটি লেখা খুঁজে পায় বেঁচে থাকার রসদ আর ভাবায়, শেখায় আরোহণ করতে সভ্যতার স্বর্ণ শিখরে।

নতুন মন্তব্য


দিন দুপুর ।। শিল্প সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ

সম্পাদকঃ আল-আমীন আপেল

সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ প্রতীক

যোগাযোগ

ইমেইলঃ alaminbrur24@gmail.com

ফেচবুক পেজ (ক্লিক করুন) : https://www.facebook.com/dindupurofficialpage
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান । গাহি সাম্যের গান !মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই । --কাজী নজরুল ইসলাম