ক্যাঙ্গারু ।। জাহিদ সোহাগ


নিশ্চিন্তে ঘুমের বড়ি খাই, আমার কর্তারা অফিস করছেন দেখে, মানে তারা এখন রিক্রিয়েশন শেষে ক্লান্ত, ধরে নেই অফিসে আসবে-যাবে, মিটিংয়ের ফন্দি করে করে ‘অনেক কাজ করা হয়েছে, চলো, বেরিয়ে পড়ি’, এমন অবসাদে এসে ছুটির ঘণ্টা নাড়বেন। 

অনলাইন-অফিস। হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জার, ইমেইল ইত্যাদি। হয়ত মেক্সিকোর কোনো বীচে ভলিবল খেলে পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন নীলাভ সমুদ্রকে সানগ্লাসের বাইরে রেখে। 

আমি একইসঙ্গে কয়েকটি ডিভাইস খুলে রাখি, কোনোটা হাত কোনোটা পা দিয়ে রিফ্রেশ করি বারবার, হয়ত মাত্রই একটি মেইল দেখতে দেরি, আহ্, আমাদের ক্যাঙ্গারুর ব্যবসাটা হোচট খেয়ে গেলো। যেন তারা ক্যাঙ্গারু কিনে পিকাপভ্যানে তুলতে যাচ্ছেন এমন সময় মনে হলো দেখি তো দেশের বাজার কতখানি আছে, উত্তর দিতে দেরি হলো, ক্যাঙ্গারুটিকে মাটিতে নামিয়ে রাখলেন আর সেটা লাফাতে লাফাতে চলে গেলো। 

মেক্সিকোয় ক্যাঙ্গারু পাওয়া যায় কিনা তা আমি জানি না, এও জানি না যে, তারা এখন মেক্সিকোয় আছেন কিনা।
আমি সন্ধ্যা হলেই ঘুমের বড়ি খাই। মশারি না খাটিয়ে মুখের উপর মশা থাপরাতে থাপরাতে না-ঘুমিয়ে না-মশা মেরে রাতগুলো পার করি। 

সকাল নয়টায় শুরু হয় আমার বৃদ্ধাঙ্গুলে পরিচয় আছে কিনা, আইডি কার্ডে ও নিজের চোখে পটাপট দরজা খুলছে কিনা, গার্ডের স্যালুট না সয়ে হনহন ছুটছি। সিসি ক্যামেরাগুলোর শেষপ্রান্তে নিভু নিভু দুটি চোখে আমি আছি কিনা, চা-বিস্কুট নিয়ে হাজির হয় পিয়ন।
লাঞ্চ আওয়ারে সবাই হাফ ছাড়ি, ক্যান্টিনে খাবারের ঘ্রাণ, শেষে হা করে নারীদের লিপস্টিক ঘষাঘষি। যে টেবিলে সুন্দরী বেশি আড্ডায় গুলজার তত, সিট পাওয়া যাবেই না। আমি যথারীতি প্রতিযোগীতায় না-নামা মানুষ। হাসলে মুখটি আকর্ণবিস্তৃত হয়, নাকও নয় বেশি ধারালো এমন কারুর সঙ্গে ভাব করে রেখেছি। সেই আমার জন্য সিট বাঁচিয়ে রাখে।

‘দেরি হলো যে?’ সে যথাসম্ভব না হেসে পেছনে আমার দিকে মুখ নিয়ে বলেন। আমি বাম হাতে চেয়ার টেনে ভেজা ডান হাতটি প্লেটে রেখে জবাব দেই, গতকাল যে জবাব দিয়েছিলাম।
ভীষণ কাজের চাপ। কী কী কাজ তা ঠিক বলতে পারছি না। সেও তারটা জানে না, এখন বিকাল হবার অপেক্ষা করা ছাড়া। 

আমি এক টুকরো মুরগির মাংস, হেলিকপ্টার নাম যার, ভাতের উপর নিয়ে তলায় ঝোলের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে ভাবছি। ভাবছি? এই ধরুন...না, তেমন কিছু নয়, গতকালও তাই ভেবেছিলাম। 

সে তার অভ্যাসমতো মুখের মধ্যে মাখাভাত চালান করে চিবিয়ে চিবিয়ে পেটের মধ্যে ফেলেন, আমিও তাকে অনুসরণ করি।
কাল কী কী কথা বলেছিলাম তা মনে করতে করতে আমি ভাত মাখি, যাতে একই কথা বারবার বলা হয়ে না যায়। কলিগদের সঙ্গে যতই খাতির থাক চামরার নিচে ধারালো ছুরি আছে, যার রক্তাক্ত করা ছাড়া অন্য কাজ নেই। পেট থেকে একটি শস্য যিনি উগড়ান, পরদিন শস্য চালানকারী আরেক পেটওয়ালার কাছে বলেন আবেগের বশে। তবে, এর সঙ্গে আমার তেমন নেই, তিনি প্রায় কথা বলেনই না তার আকর্ণবিস্তৃত ঠোঁট ঢেকে রাখার জন্য।

আবার আমরা স্পোর্টস জোনে যাই। যার যার মাথা খুলে লাত্থি দিতে শুরু করি। রীতিমাফিক আমি ক-এর কাছে আমার মাথা লাথি দিয়ে দিলাম, চ তার মাথা আমাকে পাস করে দিল, জ হয়ত নিজের পায়ে কোনো মাথাই পাচ্ছে না। সে রেফারির মতো সারা মাঠ দৌড়াচ্ছে।
খেলা শেষ। আমরা যে যার মাথা নিয়ে দেই ছুট। যার হাতের কাছে যেটা আছে, সেটা তার মাথা হতেই পারে।

শরৎকন্যা :: সঞ্জয় চৌধুরী



শিউলি বিছানো আঁচল পাতা ভোরের উঠোন তোমার জন্য-
তোমার জন্য মাধবী রাতের জোছনা মাখানো সুর,
তোমার জন্য বহতা নদী দূর থেকে বহুদূর।
.
বকুল ফুলের আকুল ঘ্রাণে ব্যাকুল রাতি তোমার জন্য-
তোমার জন্য নদীর কূলে কাশফুলে সাদা মেঘ,
তোমার জন্য নৌকার পালে দক্ষিণা হাওয়ার বেগ।
.
শিশির ভেজা ভোরের ঝিলে
শাপলা ফুটেছে তোমার জন্য-
তোমার জন্য দূর্বা ডগায় শিশির এসেছে নেমে,
তোমার জন্য খলশে মাছ এক পড়েছে ভিষণ প্রেমে।
.
আশিনের ঐ বিকেল বেলা রঙিন হলো তোমার জন্য-
তোমার জন্য বিকেল জুড়ে ফড়িঙের ওড়া-উড়ি,
তোমার জন্য বিকেলটা আজ সন্ধ্যায় হলো চুরি।
.
আকাশের রঙে রঙিন হলো নদীর জল তোমার জন্য-
তোমার জন্য বাউলের দল ছেড়েছে সাধের ঘর,
তোমার জন্য যুবকের বুকে ভিষণ নদীর চর।
.
তাল পুকুরের বাঁধাই ঘাটে বিকেল নামে তোমার জন্য-
তোমার জন্য পুকুরের জলে শুকনো পাতার ভেলা,
তোমার জন্য মনের তলায় জোনাক পোকার খেলা।
.
সন্ধ্যামালতী রঙ মেখে এই বিকেল সেজেছে তোমার জন্য-
তোমার জন্য কাজল মাখা সন্ধ্যা নেমেছে আজ,
তোমার জন্য ফিঙে পাখিটা ভুলে গেছে সব কাজ।
.
শিউলি ফোটা মনবোনে ঐ প্রেমের জোছনা তোমার জন্য-
শরৎকন্যা তোমার জন্য ভাসবো নদীর জলে,
তোমার জন্য শরৎ নামে আমার সমতলে।

যে বিভাগে লেখা , | 0 Comments

মিলন || হেমন্ত সরখেল



মিলন


অস্তাচলগামী সূর্য্য আমায় ডাক দিয়ে বলে যায়
আর ও একদিন হল সে গেছে লিখে নে স্মৃতির পাতায়
বৃদ্ধা সন্ধ্যা তিন মাথা নিয়ে ক্যানভাসে চড়ে বসে
গলতে গলতে মোমবাতিটাও - 'অভাগা'- বলে হাসে
ছোট্ট - 'ইচ্ছে' - শব্দটা কেন লিখেছিল অভিধানে
মরন সুযোগ পায় না বলেই জীবনের দাঁড়ি টানে
নইলে মৃত্যু আরো একবার বাঁচতে চাইত রোজ
'ইচ্ছে' দানবে খেয়েছে মজ্জা কে পাবে তার খোঁজ
তাও যদি আধা থেকে যেত ভুলে যাওয়ার আগে তার
অভিধানখানা লুকিয়ে মরন বাঁচতো আরেকবার
জীবন বসে ইচ্ছেনদীর বৈঠা নিয়ে হাতে
বাঁচবে মরন 'অপেক্ষমান' জীবনের সাক্ষাতে।

যে বিভাগে লেখা | 0 Comments

তুমি চলে এসো ।। মো: জাকির হোসেন শেখ




তুমি চলে এসো



যদি মন টানে,
অভিমান ভুলে তুমি চলে এসো, তুমি চলে এসো,
কোন এক গাঙ্গচিল উড়ে যাওয়া সন্ধায়,
আমি আছি ডুবে যাওয়া সূযের ফিরে আসার অপেক্ষায়।
যদি মন টানে,
অভিমান ভুলে তুমি চলে এসো, তুমি চলে এসো,
কদম ফুল নিয়ে কোন এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধায়,
ওড়না দিয়ে মাথা মুছে দিব,
তোমার মাথা রাখতে বুক পেতে দিব,
কপালে চুমু দিব, ভিজবে তুমি ভালবাসার মধুর সন্ধায়।
যদি মন টানে,
অভিমান ভুলে তুমি চলে এসো, তুমি চলে এসো,
কোন এক কুয়াশার চাদর ডাকা সন্ধায়,
তুলশী পাতার চা দিব,
পুষির মত তোমার গায়েব উষ্ণতা নিব,
তুমি চলে এস ভালবাসার মধুর সন্ধায়।
যদি মন টানে,
অভিমান ভুলে তুমি চলে এসো, তুমি চলে এসো,
কাশফুল নিয়ে কোন এক শরত সন্ধায়,
তোমার বুকে মাথা রেখে দেখব মেঘ আর শশীর লুকোচুরি খেলা।
যদি মন টানে,
অভিমান ভুলে তুমি চলে এসো, তুমি চলে এসো,
তুমি আমি সবুজ ধানের হিল্লোলে মিশে যাব সাঁঝের বেলায়,
তোমায় নিয়ে হারাব জোনাকিদের মেলায়।
যদি মন টানে,
অভিমান ভুলে তুমি চলে এসো, তুমি চলে এসো,
মাটির সানকীতে পান্তা দেব,
সাথে দেব ইলিশ মাছের ঝুল,
মন থেকে অভিমান ঝেড়ে ফেল,
ভুলগুলো হোক ভালবাসার ফুল।
যদি মন টানে,
অভিমান ভুলে তুমি চলে এসো, তুমি চলে এসো,

যে বিভাগে লেখা | 0 Comments

প্রথম প্রেম ও অন্যান্য ।। সজল বাগ





আমার কবিতা



আমি কবিতা লিখতে পারি,
আমার কবিতায় দীর্ণ করতে পারি
বর্তমান মূল‍্যবোধহীন মানব-সভ্যতার
অন্তঃসারশূণ‍্য বক্ষ,
আমার কলমের আঁচড়ে নগ্ন করতে পারি
সমাজের যত পঙ্কিল কলুষতা,
প্রেমহীন যত দ্বীপ-পরিবারের
সীমাহীন জটিলতা,
ক্ষুধার্ত হায়নার লোলুপতা নিয়ে মুখোশপরা ভালোবাসা।
দায়-দায়িত্ব থেকে শতহস্ত নিরাপদ দূরত্বে থেকে
আত্মশ্লাঘা প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত যুবকদের
কষাঘাত ও করতে পারি আমি।
আমি লিখতে পারি, কিন্তু তুমি পড়বে তো
আমার কবিতা ?
জারিত হবে তো আমার ভাবনায় ?
উদ্বুদ্ধ করবে কি আর ও পাঁচজনে
সেই ভাবনায় সামিল হতে ?
নাহলে আমার লিখে কি লাভ !
তার থেকে বরং চেষ্টা করি
রামমোহন - বিদ‍্যাসাগরের প্রদর্শিত পথের পথিক হতে,
আমার সমস্ত শক্তিটুকু একত্রিত করে
প্রাণপনে চেষ্টা করি সমাজের জঞ্জাল সরানোর -
বাস্তবের রুক্ষ ভূমিতে, শুধু কাগজের পাতায় নয়,
সেখানে সামান্যতম সফলতাই আমাকে দেবে
অনির্বচনীয় আনন্দ - সীমাহীন প্রশান্তি ।।


প্রথম প্রেম



জানি তোমাকে পাব না কভু আর শিশিরভেজা প্রাতে,
কিংবা কভু ধরব না ও হাত মায়াবী জ‍্যোৎস্নারাতে,
তবুও তোমার অস্তিত্বটা কেন আজও এতটা প্রকট
হৃৎপিণ্ড থেকে শোণিতধারারা যেন তোমাকেই বয়ে আনে।
মনকে বোঝাই, ওরে থাম, আর কেন?যুগ পেরিয়ে গেছে,
মুছে ফেল যত জলের আলপনা, বৃথা হবে তোর বওয়া,
মন বলে, তবে লিখেছিলে কেন, এমন কালি দিয়ে?
যা মুছবে কেবল সেদিনই, যখন শ্মশানচিতায় গিয়ে।
কি আর করা? মনের সাথে তো ঝগড়া করাও দায়,
তার হুকুমেই ওঠ-বস করা, একান্ত নিরুপায়,
শেষে ভাবি যাক,সময় একদিন সবই ভুলিয়ে দেবে,
জানিনা সেদিনটা আগে আসবে, না জীবনের শেষদিন।।

যে বিভাগে লেখা | 0 Comments

স্থিতি || রতন সেনগুপ্ত



স্থিতি 



তরঙ্গ কোথায় সবই তল্পিতল্পা
বিনীত নিবেদন
যতেক উৎসব মাতে আপাদমস্তক
রাত ভাঙে নিজ লজ্জায়
বিগলিত বুদবুদ, প্রনাম নেবেন
হাভাতের আদিখ্যেতা বেশি
দেখবেন একটু, দেখবেন
দেখে দেখে গা সওয়া মাগগিগন্ডা
চমকে দেবার মত কিছু দেবার হলে দিন
বড় নিস্তরঙ্গ, নেশাতে কতটা আর উত্তেজনা বাড়ে
পন্থা আর পথে অজস্র পাকদণ্ডী
ফুসফুস ছোট হয়ে আসে
অক্সিজেন কোথায় নেবার
সব ব্যবসার খাতির
আমরা চালিয়ে নি, আপনিও চালিয়ে দেন
নৈব্যক্তিক দিনপাত
ভাল আছি আপনি ভাল থাকুন
নিস্তরঙ্গ জলে প্রলয় নেই মদির সঙ্গোপন
এই তো সময়কাল
পানসি ভাসান, ছল ছল জল জল......

যে বিভাগে লেখা | 0 Comments

নষ্টের বালুচর || মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম




নষ্টের বালুচর




নষ্টের বালুচরে কষ্টেরা বসত করে অসাম্যের বন্ধনে,
বন্দি সাম্যতার বোধ লোভের ক্রোধে কন্টক কাননে।

মানবিকতা দূরাচার হিংসার জয়জয়কার বোধ গেছে মরে,
গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে তৃপ্তির ডেকুর ছাড়ে।
মানবিকতা অবাক করা পাগলামি নির্বুদ্ধিতার কাতারে,
সুকোমল বৃত্তি গুলো কুঁড়িতেই শুকিয়ে মরে।
বুর্জুয়া পলিতে নষ্টের ক্ষেত্র দিনে দিনে উর্বর ফসলী,
সততা ও ন্যায়ের যাপন শাস্তি, নিশ্চিত মাশুলী।
আগামীর চোখগুলো দেখে
আর মনে মনে ভাবে,
এত দুঃসাহস আছে কার সততায় জীবন কাটবে?
নতুনেরা চোখবুঝে যোগদেয় গড্ডালিকার যুদ্ধে,
ভোগের বিলাসিতায় যোগের প্রতিযোগীতায় মাতে মদ্দে।
অবিরত গর্জনে ফুলে ফেঁপে উঠছে গড্ডালিকা প্রবাহ,
অনৈতিক বানে সবাইকে কাছে টানে তৈরি হচ্ছে নতুন আবহ।
এখানে সাম্য আর সততা হচ্ছে হত্যা অনৈতিকই যৌক্তিক,
ভোগের বিলাসে পরিতৃপ্তি আসে মৃত্যু ঘটে আত্মীক।
নষ্টের বালুচরে অনৈতিক আবাদের জৌলুষ বাড়ে,
কষ্টেরা হাত ধরে দিনে দিনে বাড়ে নষ্টের বালুচরে।

যে বিভাগে লেখা | 0 Comments

ক্ষয়িস্নু || পরীক্ষিৎ দেবনাথ



ক্ষয়িস্নু 




এ্যালকোহলিক জীবন যাপন
এ্যালকোহলিক স্বাস্থ ,
এ্যালকোহলিক না হলে সে
আর কিছু দিন বাঁচতো ,
গঞ্জ গাঁয়ে গঞ্জিকাতে -
দিচ্ছে যারা দম্ ,
সোমিক্খাতে দেখছি তাদের
হচ্ছে আয়ু কম ,
সিদ্ধপুরুষ যায় না যে গাঁয়
নিষিদ্ধ সে গ্রাম ,
যাচ্ছে যারা প্রত্যহ তার
ছড়াচ্ছে বদনাম 

যে বিভাগে লেখা | 0 Comments

দুর্ভাগা ও অন্যান্য || টি এইচ বকুল



দূর্ভাগা



ঝরে গেছে স্বপ্ন গুলো
গাছের পাতার মত,
শুকনো ডালে বসে আছে
শকুন গুলো যত।
প্রহর গুনে প্রতিক্ষার-ই
সুখ গুলো যে খেতে,
তীক্ষ্ম নজর রেখেছে যে
আমার উপর পেতে।
একটি দুটি সুখের ফাগুন
আসেও যদি নীড়ে,
শনির শকুন জটলা বেঁধে
রাখে তারে ঘিরে।
বুঝে গেছি আলোর ভিরেও
আঁধার কেন আমি,
আমার সময় দিয়ে ছিলাম
ভেবে তারে দামি।
রসও গেল কষও গেল
রইলো শুকনো কাঠ,
বুকের ভিতর বসত এখন
শ্মশান পুড়ির ঘাট।
আসা যাওয়া চিতার ধোঁয়া
বাতাস ভারি হয়ে,
দৃষ্টি জুড়ে মেঘলা আকাশ
রবির আলো ক্ষয়ে।
তাই, রাত দুপুরে ঝিঁ ঝিঁ হয়ে
হৃদয় কেঁদে মরে,
দুচোখ হতে এখন শুধু
অশ্রু ফোঁটা ঝরে।।


পরিচয়হীন



এখনো অনেক শিশু
পথে করে বাস,
বিষে ভরা বায়ুতেই
নিয়ে তারা শ্বাস।
রোদ ঝড় বৃষ্টিতে
কষ্টের বানে,
কঁচি দেহ ভাঙ্গে তার
জীবিকার টানে।
অনাহাড়ী কাকে বলে
তারাই জানে ভালো,
শুধু জলে পেট ভরা
নিভে তার আলো।
তিলে তিলে বড় হয়
ভালোবাসা ছাড়া,
মা-বাবা কাকে বলে
জানেনা তো তারা।
জানে শুধু এতো টুকু
লড়তে হবে,
এ দেহে যত দিন
প্রাণটা রবে।
জীবন যুদ্ধে তাই
লড়ে প্রতিক্ষণ,
এক মুঠো অন্নের
বড় প্রয়োজন।
পৌষের রাত কাটে
কুয়াশায় মেখে,
দুটি চোখে হতাশার
ছবি যায় এঁকে।
এভাবেই চলে য়ায়
জীবনের বেলা,
অনাদরে ভেসে যায়
ভাগ্যের ভেলা।
পথে শুরু পথেই শেষ
কেউ নেই আপন,
আঁধারের খোলা আকাশ
তার যে ভূবন।।

যে বিভাগে লেখা | 0 Comments

প্রস্তরযুগ ও অন্যান্য ।। স্বপন গায়েন




মহেঞ্জোদাড়ো




শেষ বিকেলের রোদের সাথে একটি মেয়ে
মেঘের সাথে ভাব করেছে মেঘ না চেয়ে।
শ্বেতকরবী জুঁই চামেলি হৃদয় আকাশ জুড়ে
রাত্রি লেখে হিসেব খাতায় জীবন কবর খুঁড়ে।
মনের কথা গোপন রেখো পার যদি
মহেঞ্জোদাড়োয় খুঁজলে পাবে একটি নদী।
নদীর জলে উথাল পাথাল লেগেছে এক ঢেউ
ভালোবাসার মুগ্ধ বাঁকে দাঁড়িয়ে আছে কী কেউ?
বালুকাবেলায় মেঘের সাথে গোপন অভিসার
লজ্জা রাখো শাড়ির ভাঁজে অবসান প্রতীক্ষার।


সবুজ দ্বীপ




নদীর বাঁকে সবুজ দ্বীপ
হাজার পাখির মেলা
নীল গগনে শীতল হাওয়া
করছে খুশির খেলা।
আকাশ নদী ভোরের পাখি
সবুজ দ্বীপের রাজা
রাজকন্যার পাহারা দেয়
হাজার দুয়েক প্রজা।
আকাশ পথে আসলো হঠাৎ
পক্ষীরাজে চড়ে
ভিনদেশী এক রাজপুত্তুর
সোনার মুকুট পরে।
বুকের ভিতর নীল পৃথিবী
দু’ফোটা অশ্রুজল
ভালোবাসার পরশ পেয়ে
মন হল চঞ্চল।
শ্বেত করবী জুঁই চামেলি
হাজার বাতির তারা
উৎসব আজ সবুজ দ্বীপে
সবাই খুশিতে মাতয়ারা।।


প্রস্তরযুগ



ট্রাম লাইনের ধারে দাঁড়িয়ে অবাক পৃথিবী
আয়ুরেখা যেন ছুঁয়ে গেছে অচেনা রোদ্দুর।
জানালায় ঠেস দিয়ে বসে নিজের বিবেক
ভাঙনের শব্দ চলন্ত ট্রামের মত ...
ইশারায় ডাকে মিথ্যে স্বপ্নের মায়াজাল
চরম সংকটে একা দাঁড়িয়ে প্রস্তরযুগ।
গণিকার চোখের কাজলে ভিজে ওঠে ভোর
লজ্জাহীন চাহনিতে প্রবৃত্তির উষ্ণতা থামে না।
ট্রাম লাইন জুড়ে উৎসারিত জীবনের জলছবি
ক্লান্ত বিষণ্ণ ট্রাম মুখ থুবড়ে পড়ে মাঝ রাস্তায়।
প্রতিটি রাতে নারী পুড়ছে, গণিকা পুড়ছে –
দেখতে দেখতে আবার একটা লাজুক সকাল।
ট্রাম লাইনের ধারে রেলিং জুড়ে কোলাহল
ভোরের আলোয় নষ্টের সীমারেখা মুছে যায়।।

যে বিভাগে লেখা | 0 Comments

প্রতীক্ষা || দিপংকর রায় প্রতীক





প্রতীক্ষা


সমস্ত প্রতীক্ষা একটা সবুজ
স্বপ্নের অঙ্কুর অথবা ঝকঝকে
মোনালিসা, একটা বৃক্ষ
বাহারি স্বাদে গমগম
নীলাকাশ মাখা পুষ্পিত সিম্ফনি।
সমস্ত প্রতীক্ষা বর্ণিল জলছবির
ভানুমতি অথবা অযুত স্মৃতিভ্রম
একটা গন্তব্য, তপ্ত মরুপথে চোরাবালির
ইশারা, ধূমায়িত শ্বাস।

যে বিভাগে লেখা | 0 Comments

স্মৃতিতে কৃষ্ণ চূড়া এবং || হাজেরা বেগম





স্মৃতিতে কৃষ্ণ চূড়া এবং



এই সেই কৃষ্ণ চূড়া--
যার ফুলে ফুলে ভরে 
যেত আমার ক্ষণ--
এই সেই কৃষ্ণ চূড়া
যার রঙ্গে রঙ্গে ভরে 
যেত আমার মন--
যার তলে দাড়িয়ে 
আমার আগামী স্বপ্ন সুখের
ছবি এঁকেছি...
এই সেই কৃষ্ণ চূড়া--!!

যেথায় প্রতিদিনের মিলন--
মেলা হতো শত প্রেমিক প্রেমিকার
তুমি আমার চোখে চোখ রেখে
হাতে হাত ছুঁয়ে ভালোবাসার 
কাব্য রচনা করেছিলে--
মনে কি পড়ে প্রথম সেইদিনের কথা
আমার গালে দু'আঙ্গুলে টোঁকা দিয়ে বলেছিলে
"এতো রাঙ্গা হয় লাজে"...
ভুলিনি ভুলবার নয়--
বুঝতে দু'জনের শুধু একটু দেরী 
হয়েছিলো -- ভালোবাসি কতো--
দু'জন দু'জনাকে--হারিয়ে ছিলাম 
যেদিন তোমায় -- সেদিন হতে আজও
আছি তোমার আগমনের আশায়
ফালগুনের এই দিনে - আজও আসি
যদি দেখা পাই তোমার- শুধু একটি বার-- 
আর একবার ছুঁয়ে দেখবো--
আমার না পাওয়া ভালোবাসা কে--
আকুল হয়ে শুধু কৃষ্ণ চূড়া ফুলকে 
দু'হাতে বুকে জড়িয়ে রাখি--
তোমাকে অনুভবের সমস্ত--ভালোবাসা দিয়ে--
কিন্তু কই তোমার ছুঁয়ে দেয়া--
গাল তো আর রাঙ্গা হয় না...!!
আমার দু'চোখ ঝাপসা হয়ে আসে--
তবু এই কৃষ্ণ চূড়া তলায়-তোমারই অপেক্ষায়-
থাকবো পথ চেয়ে--আমার আজীবন...!!

যে বিভাগে লেখা | 0 Comments

অনুভব ও অন্যান্য ।। আমির

তৃপ্তি

আজ জোসনা ধারার ঢল নেমেছে,
চোখের কোণে জল নেমেছে,
এ জল তোমায় পাওয়ার!
আজ আকাশ তারি দ্বার খুলেছে,
হৃদয় খেয়া পাল তুলেছে,
আর কিছু নেই চাওয়ার!
তুমি আমার সব সাধনার-
তৃষিত সেই নারী,
ওগো তোমায় পেয়ে পূর্ণ হল
আমার হৃদয় বাড়ী।
.
আহা ভালোবাসা বাহুবলী
জয় করে সব ক্ষত,
দুঃখ,ব্যথা,যাতন,বেদন
মূমুর্ষ আজ মৃত!
তুমি আমার আশার আলো
নিরাশা গো ছাড়ি,
তুমি আমার সব সাধনার-
তৃষিত সেই নারী।
.
দেহের খোজে দেহ ওগো
মন খোজে গো প্রেম,
তুমি আমার সকল পাওয়া
হেমের চেয়েও হেম।
তুমি আমার মায়াতিথী, ছায়াবিথী-
প্রণয় প্রলয়কারী।
তুমি আমার সব সাধনার-
তৃষিত সেই নারী।



অনুভব



কত মন দেখ পড়ে আছে আঁধারে,
কত প্রেম দেখ ডুবে গেছে পাথারে!
কত হাত দেখ হাত খোজে অকাতরে,
কত আঁখি দেখ ঝরে পড়ে অঝরে!
কত মন দেখ!
.
কত কথা কত হিয়া কয়ে যায়,
কথা ব্যথা মুখ বুজে সয়ে যায়,
কত দিনে আর,
কমে এই আঁধার,
অমানিশা বুক জুড়ে বয়ে যায়।
কত সুখ ব্যথা হয় সেতারে,
কত সুর বিরহ হয়ে বাজে গীটারে,
কত মন দেখ পড়ে আছে আঁধারে,
কত প্রেম দেখ ডুবে আছে পাথারে।
.
কত বেলা দেখ গোধূলিতে ডুবে চুপ,
কত আশা দেখ নিরাশারি পোড়া ধূঁপ,
কত জলে,
আঁখি পলে,
কত বুকে দেখ নিদারুন ব্যথা রুপ।
কত দিন কাটে অশান্ত প্রহরে,
কত রাত কাটে আঁধারেরি জোয়ারে,
কত মন দেখ পড়ে আছে আঁধারে-
কত প্রেম দেখ ডুবে আছে পাথারে।
.
কত ফুল দেখ ফোটে এ পথে,
কত ভুল দেখ জীবনেরি পরতে,
কত মেঘমালা,
কত উতালা,
ফুল ফোটা এই চির শরতে।
কত চোখ দেখ ভেসে গেল নজরে,
কত ব্যথার কথা মানবেরি পাজরে,
কত মন দেখ পড়ে আছে আঁধারে!
কত প্রেম দেখ ডুবে গেছে পাথারে!

যে বিভাগে লেখা | 0 Comments

কবিতা-আল-আমীন আপেল

শেষ প্রশ্ন


নিশ্চেতন করা সুবাসিত বকুলগুলি এখন আমার জন্য ফোঁটে না। বকুলতলার বকুলঝরা পথটায় এখন আমার চলতে মানা।
পথটায় এখন তোমার আর তার মিলে তোমাদের আনাগোনা।

হৃদয়ের রক্তে রাঙানো কৃষ্ণচূড়াগুলি এখন আমার জন্য ফোঁটে না। আমার মতো পাপীর হৃদয়ের রক্ত চুষে কৃষ্ণচূড়াগুলি আজ লাল হয় না। পথটায় আজ তোমাদের নানা রঙের ভালাবাসামাখা গোধূলির আড্ডাখানা।

পাষাণী, তোমাদের সুখের গল্প আজ আর লিখতে চাই না আমি। পাপভরা হৃদয়ের সবটুকু রক্ত দোয়াতে রেখে দিয়েছিলাম তোমার জন্য। ইচ্ছে ছিলো বড় করে লিখবো গল্পটা। কিন্তু, না গল্পটা লেখা শেষ হলো না।

রয়ে গেলো অনেকটা বাকি। পৃথিবীটা পর হয়ে যাবার আগে শেষ প্রশ্ন তোমার কাছে- সেদিনের সেই পিছু ডাক, আড়ালে আবডালে ভাল থাকার স্বপ্নটার মিথ্যে ছিলো কোথায়?

যে বিভাগে লেখা | 1 Comments
পুরাতন পোস্টসমূহ

ইমেইলে নিন সাম্প্রতিক প্রকাশনা

    =*একটু সম্পাদকীয়*=

    দিন দুপুর একটি অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা, সমাজ-সংস্কৃতির ভাল-মন্দ, উত্থান-পতন আর সংঘাত-প্রতিঘাত, ঘৃনা-প্রেম অর্থাৎ পৃথিবীর তাবৎ বিষয় উঠিয়ে নিয়ে আসে তার প্রতিটি পাতায়। লেখকদের মননশীল লেখায় প্রতিটি বিষয় হয়ে উঠে ব্যঞ্জনাময় আর সঙ্গত, পাঠকের আগ্রহে প্রতিটি লেখা খুঁজে পায় বেঁচে থাকার রসদ আর ভাবায়, শেখায় আরোহণ করতে সভ্যতার স্বর্ণ শিখরে।

নতুন মন্তব্য


দিন দুপুর ।। শিল্প সাহিত্যের ওয়েবম্যাগ

সম্পাদকঃ আল-আমীন আপেল

সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ প্রতীক

যোগাযোগ

ইমেইলঃ alaminbrur24@gmail.com

ফেচবুক পেজ (ক্লিক করুন) : https://www.facebook.com/dindupurofficialpage
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান । গাহি সাম্যের গান !মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই । --কাজী নজরুল ইসলাম